Sponsored

A trip to Murshidabad



হাজারদুয়ারি :-এটি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের স্মৃতি বিজড়িত মুর্শিদাবাদ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকাভুক্ত।মুর্শিদাবাদ শহরের সেরা আকর্ষণ হাজারদুয়ারি । ১৮৩৭ সালে নবাব নাজিম হুমায়ুন খাঁয়ের জন্য ৮০ ফুট উঁচু তিনতলা গম্বুজওয়ালা এই প্রাসাদটি নির্মিত হয়। আদপে ৯০০টি দরজা হলেও আরও ১০০টি কৃত্রিম দরজা রয়েছে প্রাসাদে। তাই নাম হাজারদুয়ারি।

প্রাচীন মুর্শিদাবাদের স্মৃতি নিয়ে অপরূপ গথিকশৈলীর এই প্রাসাদ এখন মিউজিয়াম। আক্ষরিক অর্থেই এ এক ঐতিহাসিক জাদুঘর। নীচের তলায় রয়েছে তৎকালীন নবাবদের ব্যবহৃত প্রায় ২৭০০টি অস্ত্রশস্ত্র। যার মধ্যে আলিবর্দি ও সিরাজের তরবারি এমনকী যে ছুরিকা দিয়ে মহম্মদি বেগ সিরাজকে খুন করেছিল তা পর্যন্ত রক্ষিত আছে এই সংগ্রহশালায়।
এই সুরম্য বিশাল রাজপ্রাসাদের দ্বিতলে দেখা যায় রুপোর সিংহাসন যেটি ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী মহারানি ভিক্টোরিয়ার দেওয়া উপহার। ১৬১টি ঝাড়যুক্ত বিশাল ঝাড়বাতির নীচে সিংহাসনে বসে নবাব দরবার পরিচালনা করতেন। মন্ত্রণাকক্ষের লুকোচুরি আয়না, দেশ-বিদেশ থেকে সংগৃহীত বিশ্ববিখ্যাত সব ঘড়ি, মার্শাল, টিশিয়ান, রাফায়েল, ভ্যান ডাইক প্রমুখ ইউরোপীয় শিল্পীর অয়েল পেন্টিং, প্রাচীন সব পাথরের মূর্তি হাজারদুয়ারিকে বিখ্যাত করে তুলেছে।
ত্রিতলে আছে নবাবী আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন সোনা দিয়ে মোড়া কোরাণ শরিফ, অমূল্য পুঁথিপত্র, আইন-ই-আকবরির পান্ডুলিপি সহ অসংখ্য বইয়ের সম্ভার। ভারতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসেরও কিছু বিশিষ্ট নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে এই মিউজিয়ামে। হাজারদুয়ারির চত্বরে রয়েছে ১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে জনার্দন কর্মকারের তৈরি ১৮ ফুট লম্বা, আট টন ওজনের ‘জাহানকোষা’ কামান বা বিশ্বজয়ী কামান। এই কামানে একবার তোপ দাগতে ৩০ কেজি বারুদ লাগত বলে জানা যায়। এটি বাচ্চেওয়ালি কামান নামেও পরিচিত। 

কাটরা মসজিদ:

১৭২৩ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁ এটি নির্মাণ করান। মূলত মন্দিরের উপাদান দিয়েই তৈরি হয়েছিল মসজিদটি এমন ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে। তবে নির্মাণশৈলী অপূর্ব, যদিও অনেকাংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের তিনটি বিধ্বস্ত; চার কোণে চারটি মিনারের উচ্চতা হবে আনুমানিক আশি ফুট, তন্মধ্যে দু’টি মিনার কালের কবলে পড়েছে। মসজিদটিতে এক সঙ্গে সাতশো জন বসে নামাজ পড়তে পারে। এটি শুধু প্রার্থনাগৃহ নয়, নবাবের সাময়িক বসবাসের জন্যও ব্যবহৃত হত। কালো পাথরের খিলানযুক্ত বিশাল প্রবেশদ্বার। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে মসজিদটির প্রভূত ক্ষতি হয়েছিল। কথিত আছে, মক্কার অনুকরণে এটি নির্মিত হয়েছিল। ভাবতেও বেশ অবাক লাগে যে মসজিদ চত্বরেই রয়েছে একটি শিব মন্দির। কাটরা মসজিদের পেছনেই রয়েছে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-র সমাধি। 



মতিঝিল পার্ক : প্রকৃতি তীর্থ মুর্শিদাবাদের মতিঝিল পার্ক।এই মতিঝিলের বর্তমান আয়তন এক হাজার ৫০ বিঘা। এর আশপাশের অনেক জায়গাই আজ বেদখল হয়ে গেছে। মতিঝিল মূলত একটি বিশাল হ্রদ। এর মাঝখানে রয়েছে বিশাল ভূখণ্ড আর তিনদিকেই জল। মাঝখানের এই ভূখণ্ডে বর্তমানে একটি পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র করা হয়েছে। এটি মুর্শিদাবাদের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় পার্ক।
২০১৫ সালের ০১ জুলাই পার্কটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর আগে, এই বিশাল জায়গাটি পরিত্যক্তই পড়ে ছিলো। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করেন। মতিঝিল পার্কের বর্তমান নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রকৃতি তীর্থ’।
ঐতিহাসিক নমুনা বলতে এখানে রয়েছে একটি মসজিদ, সমাধিক্ষেত্র ও মতিঝিল হ্রদ। ঘসেটির প্রাসাদ আজ নিশ্চিহ্ন। তবে মীরমর্দনের কামানের একটি অংশবিশেষ এখানে রাখা হয়েছে। মূল কামানটি রয়েছে হাজার দুয়ারি প্রাসাদে।
বাংলার প্রধান তিনি নবাব- মুর্শিদকুলি খাঁ, আলীবর্দী খাঁ ও সিরাজ-উদ-দৌলার তিনটি ভাষ্কর্য রয়েছে এই পার্কে।
মতিঝিলের মূল ফটকটি আজও রয়েছে, তবে তা ভগ্নপ্রায়। পাশেই নতুন করে গেট তৈরি করা হয়েছে। কথিত রয়েছে, মতিঝিল থেকে একসময় খোশবাগ দেখা যেতো।বর্তমানে মতিঝিল শুধু একটি পার্কই নয়, মুর্শিদাবাদের বড় বিনোদনকেন্দ্রও বটে। বিকাল থেকেই নাচ, গান আবৃত্তি, নাটকসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকে মতিঝিল।বিশাল এই পার্কে রয়েছে একাধিক উন্মুক্ত মঞ্চ যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলতেই থাকে। ২০ টাকার বিনিময়ে মতিঝিল পার্কে ঢুকতে হয়। তবে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’র জন্য আরও ২০ টাকা গুনতে হয়।এখানে একাধিক বাংলো বাড়ি রয়েছে। রয়েছে বিশাল উচু টাওয়ার যেখান থেকে পুরো মতিঝিলতো বটেই মুর্শিদাবাদেরও অনেকটা দেখা যায়। অত্যন্ত আধুনিক ও দৃষ্টি নন্দন পার্কের মিউজিক্যাল লাইটগুলো অসাধারণ দৃশ্যের জন্ম দেয়।
ঘসেটি বেগমের প্রাসাদটি যেখানে ছিলো সেখানেই বর্তমানে একটি মঞ্চ বানিয়ে পলাশীর ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’ হয়। আজকের প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে এই মতিঝিল থেকেই।
ঘসেটির ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদে সাউন্ড অ্যান্ড লাইট শো
একদিন যে প্রাসাদে বসে বাংলার বিরুদ্ধে, সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তারই ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে এ প্রজন্ম জানছে সেই ইতিহাস। মাঝে কেটে গেছে ২শ ৬০ বছর। মহাকালের নিয়মে এ তেমন বেশিকিছু নয়, ইতিহাস তো ফিরে আসবেই হাজার বছর পরে হলেও।















Post a Comment

0 Comments