ও মা স্কুলে যাব,
টিফিনে কিছু খাব, একটা
২০ পয়সা দাওনা। অনেক আবদারের পর-
ঠিক আছে আচার কিংবা
বাজে কিছু খাবিনা বলে
মা আঁচল থেকে ২০
পয়সার একটি কয়েন দিতেন।
আর দুপুরে স্কুলের টিফিন ছুটিতে মায়ের কথা ভুলে সেই
প্রিয় আচার বা আইসক্রিম
খাওয়া!সেই সময় ৫
পয়সা দিয়েও লজেন্স বা আটা বিস্কুট
পাওয়া যেতো!!!
এসব
৩৮ বছর আগের কথা।
আর এখন হোটেলে গেলেন
ভাত খেতে, খাওয়া শেষ। বিল এল
এক শত ঊনপঞ্চাশ টাকা।
আপনি দিলেন হোটেল ক্যাশিয়ারকে দুই শত টাকার
একটি নোট। একান্ন টাকা
মিলিয়ে দিতে সে পঞ্চাশ
টাকার একটি নোটের সাথে
আপনাকে একটি চকোলেটও দিল।
কারণটা সবারই জানা। এক টাকার কয়েনের
স্বল্পতা। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে অতি পরিচিত
১,২,৩,৫,১০,২৫ ও
৫০ পয়সার মুদ্রা। যার মূল্য ৮০
বা ৯০ দশকেও ছিল
অনেক বেশী। যদিও ১,২,৩, ৫,১০,২০, ২৫ পয়সার
মুদ্রা এখনকার ১০-১৫ বছর
বয়সীদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো বইয়ে ছাড়া প্রত্যক্ষভাবে দেখা সম্ভব হয়নি।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায়
পর্যায়ক্রমে এসব মুদ্রার প্রয়োজনীয়তা
কমে গিয়ে আজ তা হারিয়ে
গেছে বলে মনে করেন
অনেকেই। ১ পয়সাকে এক
পাই, ২ পয়সাকে দুই
পাই, ৩ পয়সাকে তিন
পাই, একইভাবে ৫ পয়সাকে পাঁচ
পাই, ১০ পয়সা (দশ
পাই), ২৫ পয়সা (চার
আনা), ৫০ পয়সা (আধুলী
বা আটা আনা), ৭৫
পয়সা (বারো আনা), এক
টাকা ২৫ পয়সা (পাঁচ
সিকি) বা দেড় টাকা
সংখ্যার উচ্চারণগুলো বেশ পরিচিত হলেও
অদূর ভবিষ্যতে তা মানুষ ভুলে
যাবে। কারণ ১,২,৩, ৫, ১০,
২৫ ও ৫০ পয়সার
মুদ্রা বাজার থেকে বিলুপ্ত হয়ে
গিয়েছে। বইয়ে পড়া হয়েছিল- শায়েস্থা
খাঁর আমলে টাকায় ৮
মণ চাল পাওয়া যেত।
কারণ তখন টাকার মূল্য
ছিল অনেক বেশী। স্বাধীনতা
পরবর্তী ভারতবর্ষে এসব মুদ্রার কথা
চিন্তা করে অনেকের মুখে
আজ এসব কয়েন টিপু
সুলতানের তরবারির মতো ইতিহাসের একটি
অংশ হিসেবে পরিণত হয়েছে।
বিভিন্ন
জায়গা ঘুরে প্রবীণদের সাথে
আলাপ করলে তারা বলেন,
এসব পয়সার মুদ্রা কখন দেখেছি আমাদের
মনে পড়ে না। এমনকি
তা মনে করতে আমাদের
বেশ কষ্ট হচ্ছে। কারণ
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সময়ের বিবর্তনে
কোথাই যে ভুরি ভুরি
এসব কয়েন হারিয়ে গেল, আমরা অনুভবও
করতে পারলাম না। তবে একথাও
ঠিক, এসব পয়সার মুদ্রা
ক্ষেত্র বিশেষে হয়তো জাদুঘর অথবা কোন কোন
ব্যক্তির শখের কারণ হিসেবে
এখনও দুএকটি জমা রাখতে পারেন।
আজ থেকে ৪০ বছর
আগেও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ৫-১০পয়সা দিয়ে
আচার,আইসক্রিম, বাদাম,হাওয়াই মিঠাই নানা রকমের জিনিস
কিনে খেত। সেখানে আজকাল
স্কুল কলেজে যাওয়া শিক্ষার্থীরা টিফিনের জন্য মা বাবা
থেকে ৫০ টাকা থেকে
শুরু করে ১০০ টাকা
নিয়ে যায়।আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, আজকাল ভিক্ষুকদের এক টাকার কয়েন
দিলে তারা তাও নিতে
চায়না। কারন এক টাকা
দিয়ে এমন কি জিনিসইবা
পাওয়া যায়!
১,
২, ৩, ৫, ১০,
২০, ২৫ পয়সার মুদ্রাগুলি
এতদিন চালু থাকলেও ২০১১
সাল থেকে এগুলি সরকারিভাবে
বাতিল হয়ে যায়।তবে এমন
এক সময় আসবে যখন
এক টাকার কয়েন, একইভাবে ২ ও ৫
টাকার কয়েনগুলোও হারিয়ে যাবে; আর তা আমাদের
কাছে শুধু স্মৃতি হয়ে
থাকবে।
১ টাকার ধাতুর মুদ্রা চালু হয় ১৯৬২-তে।
৫০ পয়সার বয়স ৬০ বছরের
কাছাকাছি। এটি অবশ্য খাতায়
কলমে এখনও চলছে।
২৫ পয়সা চালু হয়
১৯৫৭-য়। এটিও উঠে
যায় ২০১১-য়।
২০ পয়সা চালু হয়
১৯৬৮-তে। উঠে যায়
২০১১-য়।
১০ পয়সাও চালু হয় ১৯৫৭-য়। উঠে যায়
২০১১-য়।
৫ পয়সা চালু হয়
১৯৫৭-য়। বাতিল হয়ে
যায় ২০১১-য়।
৩ পয়সা তৈরি হয়
১৯৬৪-তে। ২০১১-য়
উঠে যায় এটিও।
২ পয়সা চালু হয়
১৯৫৭-য়। তাও ২০১১-য় সরকারিভাবে বাতিল
হয়ে যায়।
১ পয়সা শেষ ইস্যু
হয় ১৯৭২-এ। ২০১১-এ তা সরকারিভাবে
বাতিল হয়ে যায়।
0 Comments