Sponsored

‘আনা’ নিয়ে কথা—ভারতীয় মুদ্রার ইতিহাস

 

মনে পড়ে ছোট বেলায় পড়া সুকুমার রায়েরবিদ্যে বোঝাই বাবু মশাইকে যিনি নৌকায় উঠে মাঝির পুঁথিগত বিদ্যার অভাবের জন্য মাঝির জীবনেরচারি আনা’, ‘অষ্ট আনাশেষেবারো আনা’  বৃথা বলে কটাক্ষ করেছিলেনঝড় উঠে নৌকা ডুবু ডুবু, মাঝি যখন জানতে পারে বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই সাঁতার জানেন না, ষোলো আনা বৃথা বলে গায়ের ঝাল মেটানো

মহীনের ঘোড়াগুলিরপড়াশোনার জলাঞ্জলিগানটা মনে পড়ে

ষোলো আনা থেকে যদি চার আনা যায়



হিসেব এসে দাঁড়ায় সেই বারো আনায়

অথবা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে উত্তম কুমারের লিপে সেই বিখ্যাত গাননিলামওয়ালা আনাকিংবাচলতি কা নাম গাড়িসিনেমায় কিশোরকুমার মধুবালা কে গানের মধ্যে পীড়াপীড়ি করছেপহলে দে দো মেরা পাঁচ রূপিয়া বারো আনা “ I

 


প্রায় আট দশকের আগে মুদ্রায় "আনার" প্রচলন উঠে গেলেও এখনও কিন্তু "আনা" শব্দটিকে স্বমহিমায় জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়। পাটিগণিতের হিসেবের গণ্ডি ছাড়িয়ে আমাদের জীবনের পাটিগণিতের খাতায় নিজের একটি স্থায়ী জায়গা করে নিতে পেরেছে "আনা" 'বারো আনায় আমরা খুশি' জীবনের চাওয়া-পাওয়ায় যেমন "আনা" জড়িয়ে তেমনি না পাওয়াতেও যেন "আনা" সমান ভাগিদার- 'তোমরা বলছ আমাদের জীবনের চার আনা ফাঁকি'



 শুধু কি তাই! প্রবীণদের মুখে "আনা" শব্দটির কথা প্রায়ই শোনা যায়। "আমাদের সময় এক আনায় কত কিছু পাওয়া যেত" এক নস্টালজিয়ায় অবগাহন। আপ্তবাক্যের মাধ্যমে যেন সেই সময়কে ফিরে পেতে চাওয়া। একটুকরো সময়কে নিজের হাতের মুঠোয় ভরে নেওয়ার চেষ্টা। এই কথা বলা মাত্র চিকচিক করে ওঠে চোখ। একই সঙ্গে আনন্দ আর কষ্ট যেন পাশাপাশি উঁকি দিয়ে যায়। স্মৃতির এক ঝলকে আমরা নবীনরাও যেন ফেলে আসা একটুকরো সময়কে ক্ষণিকের জন্য হাতের নাগালে পাই।



মুদ্রার ইতিহাস বিশাল। তবে অত বিস্তৃতিতে না গিয়ে শুধু আনার কথা বা স্বাধীনতার সময় ভারতীয় মুদ্রার কথা বলা যাক। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত টাকায় ১৬ আনা হতো। ১আনায় ছিল পয়সা আবার পয়সা ছিল পাই -এর সমান। সুতরাং টাকা = ১৬ আনা = ৬৪ পয়সা = ১৯২ পাই।



 

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ভারত দুই স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম। স্বাধীনতার পরেও দীর্ঘদিন দেশে ব্রিটিশ খুচরো পয়সা নোট সুবিধার্থে চালু ছিল। পাকিস্তানে ভারতীয় টাকা 'পাকিস্তান' স্ট্যাম্প দিয়ে ব্যবহার করা হতো। স্বাধীন ভারতের খুচরো পয়সা চালু হয় ১৯৫০ সালে। ১৯৫০ সালে চালু হওয়া মুদ্রায় ব্রিটিশদের ছবি বাতিল করে অশোক স্তম্ভ শস্যের ছবি দেওয়া চালু হয়।। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত টাঁকশালে "আনা" "পয়সা" মুদ্রিত হয়েছে।

 


চার পয়সা ছিল এক আনা। চার আনা এক সিকি বা ষোলো পয়সা। আট আনা এক আধুলি বা বত্রিশ পয়সা। আর ১৬ আনা হল চৌষট্টি পয়সা বা এক টাকা। ১৯৫৭ সালে এপ্রিল সংশোধিত মুদ্রা আইন কার্যকর হয়। নামে মূল্যে এক টাকা এক টাকাই থাকে, কেবল ১টাকা = ১৬ আনা = ৬৪ পয়সা = ১৯২ পাই -এর বদলে ১০০ পয়সায় বিভক্ত হয়। নতুন মুদ্রাগুলি "নয়া পয়সা" নামে পরিচিত হয়।

 


নিউমিসম্যাটিস্ট অর্থাৎ যাঁরা মুদ্রা সঞ্চয় করে থাকেন। দেশে-বিদেশের মুদ্রা সঞ্চয় করা অনেকেরই শখ। সত্যজিৎ রায়ের "আগন্তুক" সিনেমার সেই দৃশ্যটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে যেখানে মনমোহন মিত্র ওরফে উৎপল দত্ত ছোট্ট সাত্যকির হাতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা তুলে দিচ্ছেন। মুদ্রা যেকোন দেশের সময়কালকে তুলে ধরে। সেখানকার মানুষের কথা বলে। পরিবর্তনের গল্প শোনায়। তাই তো "মুদ্রা" ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল বলে পরিচিত।




 

Post a Comment

0 Comments